অনলাইন সাংবাদিকতা বলতে কি বুঝ? বাংলাদেশের অনলাইন সাংবাদিকতার বর্তমান চ্যালেঞ্জসমূহ বিস্তারিত আলোচনা কর।
অনলাইন শব্দের অর্থ হলো যেটি ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম্পিউটার বা স্মার্ট ফোনের সাথে সংযুক্ত।আর সাংবাদিকতা মানে হল কোন তথ্য সংবাদ সংগ্রহ করা, লেখা বা প্রচার করা। তাহলে অনলাইন সাংবাদিকতার অর্থ দাঁড়ালো কোন তথ্য বা সংবাদ সংগ্রহ করে, লিখে ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রচার করা। আর অনলাইন সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বাধা-বিপত্তি, প্রতিযোগিতা ইত্যাদি।
তবে অনলাইন সাংবাদিকতার মাধ্যমে খুব দ্রুত পাঠকের কাছে পৌছানো যায়। পাঠক টেক্সট থেকে ভিডিও দেখতে পছন্দ করে আর অনলাইন সাংবাদিকতায় পাঠকের পছন্দমত ভিডিও সংযোজন করা যায়। এছাড়াও কোন ভুল সংবাদ প্রকাশিত হলে দ্রুত সংযোজন ও ডিলেট করে দেওয়া যায়।
অনলাইন সাংবাদিকতার বিভিন্ন ধরণের চ্যালেঞ্জ রয়েছে-
বেতন কাঠামো: অনলাইন সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটও হচ্ছে বেতন সমস্যা। বাংলাদেশে অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের জন্য কোন মজুরী বোর্ড নেই। তাই অনলাইনে বেতন নির্ধারণ হয় কর্তৃপক্ষের ইচ্ছায় এবং তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবাদপত্র মজুরী বোর্ডের চেয়ে কম। অনলাইন সাংবাদিকদের পেনশনেরও কোন ব্যবস্থা নেই।
ভুল তথ্য উপস্থাপন: অনলাইন সাংবাদিকতায় ভুল তথ্য বেশি ছড়িয়ে থাকে। অনলাইন সাংবাদিকরা খুব দ্রুত সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে অনেক আলু সিদ্ধ না হওয়ার মতো আগেই নিউজ পাবলিশ করে দেয়। এতে করে অনলাইন পত্রিকার প্রতি মানুষের বিশ্বাস দিনে দিনে কমছে। এছাড়াও গাছের ডালের মত হাজার হাজার অনলাইন পোর্টাল হওয়ার কারণে অনলাইন সাংবাদিকতার গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস পাচ্ছে৷
ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা: ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ার কারণে এখন যে কেউ অনলাইনে নতুন নিউজ পোর্টাল খুলে ফেলছে। প্রথমদিকে এ বিষয়টিকে মুক্ত গণমাধ্যম চর্চা ভালো হলেও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ না থাকায় বর্তমানে এটি অনলাইন সাংবাদিকতার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাংবাদিক স্বল্পতা: অনলাইন পোর্টাল খুললেও অনলাইন পত্রিকাগুলোর সাংবাদিক সংখ্যা নগণ্য। বিশাল এলাকার একটি জেলায় একজন সাংবাদিকের পক্ষে বিভিন্ন ঘটনা, দুর্ঘটনা সহ বিভিন্ন ফুটেজ দ্রুত প্রেরণ করা সম্ভব নয়। অন্যদিকে সাধারণ জনগণ সাংবাদিকদের আগে ছবি বা ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাবলিশ করে দিচ্ছে৷ তাই একবিংশ শতাব্দীতে অনলাইন সাংবাদিকতার প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জনগণ।
ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ: বিভিন্ন ব্যবসায়ী তাদের নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের জন্য অনলাইন পত্রিকা খুলছে। তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানকে বাঁচানোর জন্য সাংবাদিকদের ব্যবহার করছে ।যেমন: কিছুদিন আগে মুনিয়া হত্যায় বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভিরকে নিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের পত্রিকা কালের কন্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, নিউজ ২৪ বিডি কোন নিউজ করেনি। এভাবে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের গণমাধ্যম শিল্পকে ধ্বংস করছে।
কারিগরী দক্ষতার অভাব: বাংলাদেশে অনলাইন সংবাদ প্লাটফর্ম প্রতিষ্ঠিত হলেও এখনও সাংবাদিকদের কারিগরী দক্ষতার অভাব,আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব এবং অভিজ্ঞতার অভাব থাকা জেলা বা স্থানীয় প্রতিনিধিদের বলা হয় ঢাকার সাংবাদিকদের মতো নিউজ করে অডিও বা ভিডুও ফুটেজ দিতে। অথচ অনলাইন পোর্টালের সাংবাদিকদের কাছে আধুনিক যন্ত্র বা অর্থের ব্যাপারে কোন মাথা ব্যাথা নেই৷ বরঞ্চ সাংবাদিকদের মাসের পর মাস বিনা বেতনে কাজ করতে হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব: বর্তমানে অনলাইন সাংবাদিকতায় ফেসবুক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ইদানীং দেখা যায় কোন একটি বিষয় ফেসবুকে শেয়ার না হওয়া পর্যন্ত তা নিয়ে গণমাধ্যমে আলোচনা করা হয় না। বর্তমানে মূল ধারার গণমাধ্যমে ফেসবুক তাদের অফিসিয়াল পেজ খুলছে যার কারণ জনগণের অংশগ্রহণ। জনগণ সহজে নিজেদের মতামত দিতে পারছে৷ অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় ফেসবুকে হওয়া কোন ঘটনা থেকে নিউজ করা হয় এক্ষেত্রে ফেসবুকের ঘটনা আগের বা ভুল কিংবা গুজব হতে পারে তাই অনলাইন সাংবাদিকডায় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সঠিক তথ্য খুঁজে বের করা।
আবার ফেসবুকে সিটিজেন জার্নালিজমের মাধ্যমে যে কেউ কোন বিচার বিবেচনা ছাড়া ছবি, ভিডিও আপলোড দিচ্ছে। মূল ধারার গণমাধ্যম চাইলেই যেকোন কনটেন্ট শেয়ার করে না৷সিটিজেন জার্নালিজম করা ব্যক্তিরা দক্ষ ও অভিজ্ঞ নয় যা বর্তমানে অনলাইন সাংবাদিকতার জন্য চ্যালেঞ্জ।
নীতিমালার অভাব: অনলাইন সাংবাদিকতার কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। তাই আমাদের দেশে নিবন্ধিত কোন নিউজ পোর্টাল নেই। তাই যে কেউ অনলাইন নিউজ পোর্টাল খুলে ভুয়া বা মিথ্যা সংবাদ প্রচার করছে। আবার অনেকে শুধু অন্যের লেখা কপি পেস্ট করছে নিজের পোর্টালে যা অনলাইন সাংবাদিকতার জন্য চ্যালেঞ্জ।
হেডলাইন আতংক: অনেক সময় দেখা যায় অনলাইন সাংবাদিকরা হেডলাইনে এমন কিছু লিখে যেন পাঠকরা নিউজটি পড়ে। যেমন: কোন একজন মারা গিয়েছে হেডলাইনে লিখা হল৷ কিন্ত ভিতরে নিউজ পড়ে জানা গেল ব্যক্তিটি সিনেমায় মারা গিয়েছে । এ ধরণের হেডলাইন গুজব সৃষ্টি করে।
হুমকি: অন্যান্য সাংবাদিকদের মতো অনলাইন সাংবাদিকদের রয়েছে হুমকি। পত্রিকায় কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিউজ প্রকাশের জন্য সাংবাদিককল শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়।
নৈতিকতা: নৈতিকতা হচ্ছে মানুষের জীবনে আদর্শিক মানদন্ড। যে নৈতিকতা হারিয়েছে সে সবকিছু হারিয়েছে৷ প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার থেকে অনলাইন মিডিয়ায় নৈতিকতার প্রশ্নে এখনও পিছিয়ে রয়েছে৷ কিছু অনলাইন পোর্টালে ভালো সাংবাদিক এখনও থাকলেও সমষ্টিগতভাবে প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মিডিয়া থেকে পিছিয়ে রয়েছে৷
সবমিয়লিয়ে অসৎ, সুবিধাভোগী, অল্প শিক্ষিত এবং অনভিজ্ঞ সাংবাদিক আমাদের অনলাইন সাংবাদিকতাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে তুলেছে।
বর্তমানে অনলাইনের যেভাবে বিস্তার হচ্ছে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অনলাইন সাংবাদিকতা কোথায় যাবে তা বলা মুশকিল। কারণ ৫ বছর আগেও জানতাম না বাংলাদেশের অনলাইন সাংবাদিকতার এমন পরিবর্তন হবে।
সাংবাদিকতা,হতে চাইলে সাংবাদিক,কিভাবে সাংবাদিক হবেন,সাংবাদিক নিয়োগ,সংসদ টিভি অনলাইন,একজন সাংবাদিক কী ধরনের কাজ করে থাকেন,নৈতিক মূল্যবোধ কি